বরুড়া প্রতিনিধি
কুমিল্লার বরুড়ায় বিএনপির সাবেক এমপির গ্রামের ভোটকেন্দ্র সরিয়ে আওয়ামী লীগের এমপির বাড়ির পাশে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। নির্বাচন কমিশনের ভোট কেন্দ্রের নতুন খসড়া তালিকা প্রকাশের পর এ নিয়ে এলাকায় ব্যাপক তোলপাড় চলছে। প্রকাশিত তালিকায় দেখা যায়, বিএনপির সাবেক এমপি ও কেন্দ্রীয় বিএনপির কর্মসংস্থান বিষয়ক সম্পাদক জাকারিয়া তাহেরের (সুমন) সোনাইমুড়ী গ্রামের ভোটকেন্দ্র বাতিল করে আওয়ামী লীগের এমপি নাছিমুল আলম চৌধুরীর গ্রামের বাড়ির কাছে নেওয়া হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় বিএনপির নেতাকর্মীসহ এলাবাসীর মাঝে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। তারা বলছেন, ৫৩ বছরের পুরোনো কেন্দ্রটি সরিয়ে নেওয়ায় এলাকায় বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হতে পারে।
জেলা নির্বাচন অফিস সূত্রে জানা গেছে, ১৬ আগস্ট জেলা ভোটকেন্দ্র স্থাপন কমিটির সদস্য সচিব ও সিনিয়র জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মোহাম্মদ মুঞ্জুরুল আলম দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে খসড়া ভোটকেন্দ্রের তালিকা প্রকাশ করেন। এতে কুমিল্লার বরুড়া উপজেলার সোনাইমুড়ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্র বাতিল করে আদ্রা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া একবাড়িয়া আলিম মাদ্রাসা ভোটকেন্দ্র থেকে গণকখুলী ও হরিশপুরা গ্রামের ভোটারদের নতুন ভোটকেন্দ্র নরেন্দ্রপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে স্থানান্তর করা হয়।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, পরিকল্পিতভাবে সংঘর্ষ সৃষ্টি এবং এলাকার হাজার হাজার ভোটারকে কেন্দ্রবিমুখ করার জন্যই এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ওই দুটি ভোটকেন্দ্র পুনর্বহালের দাবিতে এরই মধ্যে একাধিকবার বিক্ষোভ সমাবেশ ও মানববন্ধন হয়েছে।
স্থানীয়রা জানান, ১৯৭০ সাল থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত সোনাইমুড়ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছেন সোনাইমুড়ী, সাতবাড়িয়া, পদুয়ারপাড়, আদ্রা ও নছরপাড় গ্রামের ভোটাররা। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি সোনাইমুড়ী কেন্দ্র থেকে দুটি গ্রাম নিয়ে আদ্রা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভোটকেন্দ্র করা হয়। এরপর থেকে আদ্রা ও নছরপাড়ের ভোটাররা ওই ভোটকেন্দ্রে ভোট দেন। আদ্রা কেন্দ্রে ভোটার ১ হাজার ৪০৬ জন। সোনাইমুড়ী কেন্দ্রে ভোটার ২ হাজার ৬৭৭ জন। নতুন খসড়া তালিকায় বড় কেন্দ্র বাদ দিয়ে ছোট কেন্দ্রের সঙ্গে সংযুক্ত করা হয়েছে। এতে চরম বিপাকে পড়বেন সোনাইমুড়ী এলাকার ভোটাররা।
সোনাইমুড়ী গ্রামের বাসিন্দা আবুল কালাম বলেন, এটা একটা অনৈতিক কাজ। কোনোভাবেই এটা মেনে নেওয়া যায় না। ৫৩ বছরের পুরোনো একটি ভোটকেন্দ্র বাতিলের পেছনে রহস্য কী? নির্বাচন কমিশন নিরপেক্ষ হলে এ ধরনের পদক্ষেপ নিতে পারে না। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের সংসদ-সদস্যের ইন্ধনে এটা করা হয়েছে। আমরা সোনাইমুড়ী কেন্দ্রে ভোট দিতে চাই। সোনাইমুড়ী ঐতিহ্যবাহী গ্রাম। এখানে স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা, বাজার, সবই আছে। উন্নত যোগাযোগব্যবস্থার মধ্যে এই ভোটকেন্দ্র। আদ্রা কেন্দ্র অনেক ভেতরে এবং এক প্রান্তে অবস্থিত। অবিলম্বে এই তালিকা প্রত্যাহারের দাবি জানাই।
এ বিষয়ে জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মোহাম্মদ মুঞ্জুরুল আলম বলেন, বড় ধরনের কোনো কারণ ছাড়া প্রতিষ্ঠিত ভোটকেন্দ্র বাতিল হওয়ার সুযোগ নেই। এলাকাবাসীর অভিযোগগুলো খতিয়ে দেখা হবে।
প্রকাশ: বুধবার, ৩০ আগস্ট ২০২৩, সকাল ১১:২০
Discussion about this post