কুমিল্লা প্রতিনিধি
কুমিল্লার লাকসাম রেলওয়ে জংশন এলাকা থেকে ক্যারেজ অ্যান্ড ওয়াগন ডিপোর টুল ভ্যানের প্রায় দুই কোটি টাকার মালামাল চুরির ঘটনা ঘটেছে। কোনো ট্রেন দুর্ঘটনাকবলিত হলে সেটির বগি উদ্ধারের জন্য বিভিন্ন যন্ত্রপাতি বহন ও সংরক্ষণে এই বিশেষ বগিটি (টুল ভ্যান) ব্যবহার করা হয়।
এদিকে চুরির ঘটনায় আজ রবিবার সকালে চট্টগ্রাম রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ সহকারী পরিবহন কর্মকর্তাকে প্রধান করে তিন সদস্যর একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। এ ছাড়া গত শুক্রবার এই চুরির ঘটনা ঘটেছে বলে দাবি করে লাকসাম রেলওয়ে থানায় শনিবার রাতে একটি মামলা করা হয়েছে।
লাকসাম রেলওয়ে জংশনে কর্মরত একাধিক ব্যক্তি জানান, দুঘর্টনাকবলিত বগি উদ্ধারের জন্য বিভিন্ন যন্ত্রপাতি বহন ও সংরক্ষণে এই বিশেষ বগিটি ব্যবহার করা হয়। এই বগি বা টুল ভ্যানটি রেলওয়ে ক্যারেজ অ্যান্ড ওয়াগন ডিপোর ইনচার্জ ট্রেন এক্সামিনার (হেড টিএক্সআর) এবং ওই বিভাগের স্টোর মুন্সির দায়িত্বে থাকে। টুল ভ্যানটি প্রতিদিন সকাল ৯টায় ও বিকেল ৫টায় দুইবার পরীক্ষণ করার নিয়ম রয়েছে হেড টিএক্সআর ও স্টোর মুন্সির। বগিটি (টুল ভ্যানটি) দীর্ঘদিন ধরে লাকসাম রেলওয়ে জংশনের উত্তর পাশে সংরক্ষিত একটি পকেট লাইনে রাখা হয়।
লাকসাম রেলওয়ে থানায় দায়ের করা মামলায় উল্লেখ করা হয়েছে, গত শনিবার (২৬ আগস্ট) ৪ নম্বর আপ সমতট এক্সপ্রেস ট্রেনের ৪০১ নম্বর কোচ-এসের সেলভেজ করার জন্য ওই দিন দুপুর ১২টায় জ্যাক স্ক্রুসহ মালামাল আনতে এটিক্সআর কফিল উদ্দিন ও ফিডার স্টাফ হরেকৃষ্ণ গিয়ে দেখেন ভ্যানের তালা ভাঙা। পরে তালা খুলে দেখেন টুল ভ্যানে জেনারেটর ও কাঠের কয়েকটি স্লিপার ছাড়া কিছুই নেই।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ঘটনার সময় হেড টিএক্সআর জাকির হোসেন ওমরাহ পালনের ছুটিতে থাকায় দায়িত্বে ছিলেন সদ্যোবিদায়ি লোকো ইনচার্জ ফোরম্যান মো. সোলেমান ও স্টোর মুন্সি হাসান আহমেদ পলাশ।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওই জংশনে কর্মরত একাধিক রেল কর্মকর্তা জানান, সার্বিক পরিস্থিতি দেখে এ চুরির ঘটনা রহস্যজনক ও সাজানো বলে মনে হচ্ছে।
কারণ এ বগিটি রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনী অফিসের পাশে থাকে। পাশাপাশি সেখানে রেলওয়ের বাউন্ডারি দেয়ালও রয়েছে। পাশের রাস্তা দিয়ে সব সময় যানবাহন ও মানুষ চলাচল করে। এমন পরিস্থিতি এত বড় চুরি হওয়া কোনোভাবেই সম্ভব নয়। এখানে রেলওয়েরই কেউ জড়িত থাকতে পারে।
বিষয়টি নিয়ে রেলওয়ে চট্টগ্রাম বিভাগের ব্যবস্থাপক আবিদুর রহমান জানান, এ ঘটনার তদন্তে রেলওয়ের চট্টগ্রাম বিভাগের সহকারী পরিবহন কর্মকর্তাকে প্রধান করে রেলওয়ের নিরাপত্তা বাহিনীর সহকারী পরিদর্শক ও যান্ত্রিক বিভাগের সহকারী কর্মকর্তাকে সদস্য করে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্তের মাধ্যমে শিগগিরই প্রকৃত ঘটনা জানা যাবে।
লাকসাম রেলওয়ে থানার ওসি মাসুদ আলম বলেন, ‘শনিবার রাতে ওই টুল ভ্যানের ৫৬টি বিভিন্ন মালামাল চুরির একটি অভিযোগ দায়ের করেন লাকসাম রেলওয়ে জংশনের হেড টিএক্সআর জাকির হোসেন। অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, ২৫ আগস্ট শুক্রবার সন্ধ্যা ৭টা থেকে ২৬ আগস্ট শনিবার দুপুর ১২টার মধ্যে এ চুরি ঘটনা ঘটেছে। আমরা ঘটনাটি তদন্ত করে দেখছি।’
প্রকাশ: সোমবার, ২৮ আগস্ট ২০২৩, বেলা ০১:১৪
Discussion about this post