নিজস্ব প্রতিবেদক
দেড় বছরে পানিতে ডুবে কুমিল্লায় শতাধিক মৃত্যুচলতি জুলাই মাসের ৬ তারিখ কুমিল্লার সদর দক্ষিণ উপজেলার বিজয়পুরে বাবার সাথে মাছ ধরতে গিয়ে জলাশয়ে ডুবে মারা যায় আট বছর বয়সী আরাফাত, তার সাথে ডুবে প্রাণ হারায় সাত বছর বয়সী সায়েমও। একই দিনে কুমিল্লা নগরীতে মামার বাড়ি বেড়াতে এসে উজিরদিঘীতে ডুবে প্রাণ হারায় আরাবী নামের আট বছর বয়সী আরেক শিশু। ওই দিনই চান্দিনায় পানিতে ডুবে মারা যায় ফাহামিদা নামের তিন বছর বয়সী একজন।
বাড়ির পাশের পুকুরে গোসল করতে নেমে কুমিল্লার দেবিদ্বারের চার বছর বয়সী দুই চাচাতো ভাই রাফিন ও আবির প্রাণ হারায়, গত জুন মাসের শুরুতে এই ঘটনা। ৩জুন কুমিল্লা নগরীর টমছমব্রীজ এলাকায় বন্ধুদের সাথে গোসল করতে নেমে ২০ বছর বয়সী বাঁধন নামে এক কলেজ ছাত্র মৃত্যুবরন করেন। এরপরদিনই গোমতী নদীতে গোসল করতে গিয়ে ১৪ বছর বয়সী তারিকুল আবির রাব্বী নিখোঁজ হয়, পরদিন নদী থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
চলতি বছরের ৬ মাসে কুমিল্লায় পানিতে ডুবে মৃত্যু হয়েছে ২৬ জনের। আগের বছর ২০২২ সালে জেলায় পনিতে ডুবে মৃত্যুবরন করেছেন ৬৫ জন। জেলা পুলিশের অপমৃত্যুর মামলার তথ্য থেকে এই চিত্র উঠে এসেছে। তবে মামলার বাইরে কিংবা আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর অগোচরে থেকে যাওয়া এমন মৃত্যুর ঘটনাও রয়েছে অনেক।
গত দুই মাসে বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমের তথ্য বিশ্লেষণ থেকে জানা গেছে, জুন মাসে মৃতের সংখ্যা ৬ এবং জুলাই মাসের ২০ দিনে মারা গেছে ৭ জন। পরিসংখ্যান বলছে, নিহতদের বেশির ভাগই ২ থেকে ২০ বছর বয়সী, শিশু এবং কিশোর। একই পরিবারের কিংবা প্রতিবেশী একাধিক শিশু খেলতে গিয়ে পানিতে ডুবে প্রাণহানির মত মর্মান্তিক দুর্ঘটনাও ঘটছে অহরহ। একই সাথে আপন ভাই-বোনের মৃত্যুর ঘটনায় নিঃস্ব হয়েছে অনেক পরিবার। আবার বেড়াতে গিয়ে পানিতে ডুবে শিশুদের মৃত্যু আপনজনের মনে শোকার্ত দাগ কেটে যায় আজীবনের জন্য।
সাঁতার না জেনে পানিতে নেমে যাওয়া এবং অভিভাবকদের অসচেতনতার কারণে তাঁদের প্রাণ হারাতে হয়েছে। অন্যদিকে গভীর জলে ডুবে কিংবা নদীর জলে ভেসে যাওয়াদের উদ্ধার কাজ করে থাকে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স বিভাগ। তবে কুমিল্লায় পানিতে ডুবে মৃত্যুর পরিসংখ্যান নেই তাদের কাছে।
পানিতে ডুবে শিশুর মৃত্যু কমিয়ে আনতে বাড়ির পাশ্ববর্তী পুকুর ডোবা বা জলাশয়ে সবুজ বেষ্টনী কিংবা গ্রীণ ফেন্সিংয়ে উৎসাহিত করার কার্যকরি উপায় হতে পারে বলে জানিয়েছেন কুমিল্লার ডেপুটি সিভিল সার্জন নিসর্গ মেরাজ চৌধুরী। তিনি জানান, আমরা মনোহরগঞ্জ উপজেলায় বাড়ির পাশে জলাশয় বা পুুকুরে গাছপালার বেষ্টনি দেয়াকে উৎসাহিত করেছি যেন শিশুরা চাইলেই পুকুরে গিয়ে নেমে যেতে না পারে। সাধারণত আমরা গ্রামের বাড়ির আঙ্গিনায় মাচা তৈরি করে যে শাকসবজির চাষ করি সেগুলো পুকুরপাড়ে করা গেলে সেখানে স্বাভাবিকভাবেই একটি বেস্টনি তৈরি হবে। এবং শিশুরা চাইলেই পুকুরে ছুটে যেতে পারবে না। এ কার্যক্রমটি উৎসাহিত করা গেলে গ্রামাঞ্চলে পানিতে ডুবে শিশুর মৃত্যুহার কমিয়ে আনা যেতে পারে। এছাড়া আমরা মনোহরগঞ্জে এলাকাভিত্তিক ৫জন তরুণকে পানি ডুবে যাওয়া শিশু বা ব্যক্তিকে দ্রুত উদ্ধার করে তার শ্বাসপ্রশ্বাস স্বাভাবিক করার যে প্রাথমিক চিকিৎসা পদ্ধতি তা শিখিয়েছি। এ কার্যক্রমগুলো পুরো জেলায় ছড়িয়ে দেয়া গেলে সাধারণ মানুষ উপকার পাবে।
কুমিল্লার সিভিল সার্জন ডা. নাছিমা আক্তার বলেন, পানিতে ডুবে প্রাণহানি কমিয়ে আনতে সকলের সচেতনতার কোন বিকল্প নাই। বাবা-মা কে শিশুর চলাফেরার বিষয়ে সচতেন হতে হবে। বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলে শিশুরা যেন চোঁখের আড়ালে যেতে অবশ্যই কারো তত্ত্বাবধানে দেয়া হয় সে বিষয়ে খেয়াল রাখতে হবে। অন্যদিকে শিশুর বয়স বাড়ার সাথে সাথে সাঁতার শেখানোর বিষয়ে বাধ্যতামূলক সচেতন হতে হবে। আমরা মনোহরগঞ্জ উপজেলায় যে গ্রীণ ফেন্সিং এর কার্যক্রম নিয়েছিলাম সেই কার্যক্রম শিশুদের নিরাপত্তা দিতে পারে। কারণ পুকুর পাড়ে কোন প্রতিবন্ধকতা থাকলে শিশুরা পানির দিকে এগুবে না।
প্রকাশ: বুধবার, ২৬ জুলাই ২০২৩, সকাল ০৯:১৭
Discussion about this post