নিজস্ব প্রতিবেদক
দীর্ঘ ২৫ বছর পর অবশেষে মুক্তি পেয়েছেন কুমিল্লার দেবিদ্বারের বীর মুক্তিযোদ্ধা রাখাল চন্দ্র নাহা (৭০)। রবিবার (২ জুলাই) কুমিল্লা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে তাকে মুক্তি দেওয়া হয়। একটি খুনের মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত হওয়ায় ২০০৮ সালে ওই বীর মুক্তিযোদ্ধার মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের সিদ্ধান্ত হয়। এরপর মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার মাত্র দেড়ঘণ্টা পূর্বে কারাকর্তৃপক্ষ তাঁর ফাঁসির দণ্ডাদেশ মওকুফের নির্দেশ পেয়েছিলেন।
বীর মুক্তিযোদ্ধা রাখাল চন্দ্র নাহা দেবিদ্বার উপজেলার হোসেনপুর গ্রামের মৃত অক্ষয় চন্দ্র নাহার ছেলে। ১৯৯৯ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি হোসেনপুর গ্রামের ধীনেশ চন্দ্র দত্তকে হত্যার অভিযোগ ওঠে। জেঠাতো বোনের স্বামী দীনেশ চন্দ্র নাহাকে হত্যার অভিযোগে রাখাল চন্দ্র নাহা ও তার ভাই নেপাল চন্দ্র নাহার বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করে দীনেশ চন্দ্রের পরিবার। এতে নেপাল চন্দ্র নাহা পলাতক অবস্থায় মারা যান।
আর রাখাল চন্দ্র নাহার সাজা ২০২৩ সালের জুন মাসে ৩০ বছর পূর্ণ হলে রবিবার (২ জুলাই) মুক্তি পান তিনি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রাখাল চন্দ্র নাহাকে ওই খুনের মামলায় জড়িয়ে ফাঁসির দণ্ডে দণ্ডিত করা হয়েছিলেন। যদিও ঘটনার দিন নাহা বাড়ি ছিলেন না। অথচ ২০০৩ সালে আদালত তাকে মৃত্যুদণ্ড দেয়।
২০০৮ সালে মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের সিদ্ধান্ত হয়। ওই সময় বিষয়টি নিয়ে রাজপথে আন্দোলনসহ মৃত্যুদণ্ড মৌকুফ করতে রাষ্ট্রপতির কাছে আবেদন করা হয়। বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীসহ ‘আমরা মুক্তিযোদ্ধার সন্তান’ কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি হুমায়ুন কবির ওই সময়ে রাষ্ট্রপতি বরাবর আবেদন করায় তাঁর সাজা মওকুফ করে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়। এছাড়া রেয়াতসহ নাহার মুক্তির সুপারিশ করা হয়েছিলো ২০১৫ সালে। অথচ তখন তিনি মুক্তি পাননি।
এ প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধার সন্তান কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি হুমায়ুন কবির সাংবাদিকদের বলেন, একজন বীর মুক্তিযোদ্ধাকে পরিকল্পিতভাবে ফাঁসিয়ে একটি হত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ড দেওয়ার ঘটনায় স্থানীয় সকল বীর মুক্তিযোদ্ধাসহ সাধারণ মানুষ কষ্ট পেয়েছেন। তিনি ওই হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় জড়িত ছিলেন না। আমরা কোনভাবেই বিষয়টি মেনে নিতে পারিনি। তাই বিষয়টি নিয়ে সোচ্চার ছিলাম।
রবিবার বিকেলে কুমিল্লা কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার মোহাম্মদ আবদুল্লাহ আল মামুন সাংবাদিকদের বলেন, জমি-জমা নিয়ে পূর্ব শত্রুতার জেরে জেঠাতো বোনের স্বামী দীনেশ চন্দ্র দত্তকে খুনের অভিযোগে বীর মুক্তিযুদ্ধা রাখাল চন্দ্র নাহা বন্দি অবস্থায় কারাগারে আসেন। ২০০৩ সালের ২০ জানুয়ারি তার মৃত্যুদণ্ডের রায় হয় আদালতে। পরে সাজার আদেশ মৃত্যুদণ্ড থেকে সংশোধিত হয়ে যাবজ্জীবন সাজা হয় গত ২০০৮ সালের ৩০ জুন। তার অর্জিত রেয়াত ৫ বছর ৭ মাস ২ দিন।
প্রকাশ: সোমবার, ০৩ জুলাই ২০২৩, রাত ১২;১৬
Discussion about this post