বিশেষ প্রতিনিধি
প্রচণ্ড গরমের কারনে গত দুই দিনে কুমিল্লার দাউদকান্দি উপজেলার বেশ কয়েকটি স্কুলের অন্তত ৩০ জন শিক্ষার্থী অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছে। তারা সবাই স্কুল কার্যক্রম চলাকালীন সময়েই অসুস্থ হয়। দাউদকান্দি ছাড়া গরমে শিক্ষার্থী অসুস্থ হবার খবর আর কোন উপজেলা থেকে পাওয়া যায় নি। এরচেয়ে বেশি তাপমাত্রা রেকর্ড করা অন্যান্য জেলায়ও শিক্ষার্থী অসুস্থ হবার খবর নেই। তাহলে কেন শুধু মাত্র দাউদকান্দি উপজেলাতে এমন প্রবণতা দেখা দিচ্ছে? এমন প্রশ্নের জবাবে কুমিল্লার ডেপুটি সিভিল সার্জন ডা. নিসর্গ মেরাজ চৌধুরী জানান, এটি একটি ম্যাস সাইকোজেনিক ইলনেস, যা বাংলায় গণ মনস্তাত্বিক রোগ। এক জনের দেখা দেখি আরেকজন অসুস্থ হবার ঘটনা নতুন নয় এমন নজির চিকিৎসা বিজ্ঞানে অনেক আছে। বিশেষ করে শিশু ও নারীদের ক্ষেত্রে এমনটা হয়ে থাকে। একজন অসুস্থ হবার উপসর্গ বা প্রতিক্রিয়া দেখে নিজের মধ্যেও সেগুলো অনুভব করার ভয় অন্যকে ভর করলে তারাও আস্তে অসুস্থ হয়। যে কারণে দাউদকান্দিতে বা একটি এলাকাতেই এই ঘটনা ঘটছে।
তিনি আরো বলেন, এর আগে সুবল আফতাব বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়েরই ষষ্ঠ শ্রেণীর এক শিক্ষার্থী গত মঙ্গলবার গরমে তালের শাঁস খাবার পর অসুস্থ হয়ে প্রাণ হারায়। সে শিক্ষার্থী কিভাবে অসুস্থ হলো কিংবা তার মধ্যে যেসব উপসর্গ ছিলো সেগুলো তার সহপাঠী এবং অন্যান্য স্কুলের শিক্ষার্থীরাও জেনেছে। যারা এমন অসুস্থ হবার দৃশ্য দেখেছে এবং জেনেছে – তারাও তাদের মাঝে অল্প উপসর্গ দেখা দিলেও সেগুলোতে ভয় পেয়ে আরো অসুস্থ হয়ে পড়েছে।
ঘটনা প্রবাহে দেখা গেছে, সবচেয়ে বেশি যে স্কুলের শিক্ষার্থী অসুস্থ হয়েছে সেই সুবল আফতাব বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়েরই ষষ্ঠ শ্রেণীর শিক্ষার্থী হাবিবা গত মঙ্গলবার গরমে তালের শাঁস খাবার পর অসুস্থ হয়ে প্রাণ হারায়। এর পর দিনই বুধবার সুবল আফতাব উচ্চ বিদ্যালয়ের অর্ধবার্ষিক পরীক্ষা চলাকালীন সময়ে অসুস্থ হয়ে পড়ে অন্তত আরো ২২ শিক্ষার্থী। এছাড়া চিনামুড়া ও নারান্দিয়া এলাকার আরো তিন শিক্ষার্থীও অসুস্থ হয় বলে জানা যায়। তাদের মধ্যে ২২জন গৌরীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিতে আসে এবং সুস্থ হয়ে দিনে দিনে বাড়ি ফিরে যায়। এদিকে বৃহষ্পতিবার স্কুল বন্ধ থাকার নির্দেশ অমান্য করে পরীক্ষা নেবার সময় দাউদকান্দি উপজেলার কানড়া মুকুল নিকেতন স্কুলের সহকারী শিক্ষিকা মার্জিয়া বেগমসহ আরো ৬ শিক্ষার্থী গরমে অসুস্থ হয়ে পড়ে। এছাড়া জিংলাতলী মাদ্রাসারও এক শিক্ষার্থী অসুস্থ হয়। দেখা গেছে, অসুস্থ হওয়া বেশির ভাগই মেয়ে বা নারী।
এ ব্যাপারে গৌরীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা তৌহিদ আল হাসান জানান, দাউকান্দির এই ঘটনাটি ম্যাস সাইকোজেনিক ইলনেস-ই। যারাই অসুস্থ হয়ে এসেছে তাদেরকে নির্ভয় দেয়া হয়েছে যে তারা অসুস্থ নয়, কাউকে পানি কিংবা অক্সিজেন দেয়াতেই সেরে উঠেছে। এরকম একটি স্কুলে বা এলাকায় হতে পারে।
তিনি জানান, এমস কোথাও অসুস্থতার প্রকোপ দেখা দিলে আতংকিত না হয়ে যারা অসুস্থ হচ্ছে তাদের মানসিকভাবে শক্ত রাখতে হবে। চিকিৎসকের কাছে নিতে হবে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে অভিভাবক বা শিক্ষকরা শিশুদেও বা অসুস্থদেও নির্ভয় দিতে হবে।
ডেপুটি সিভিল সার্জন ডা. নিসর্গ মেরাজ বলেন, হাবিবার মৃত্যুর পর সুবল আফতাব স্কুলটি শিক্ষার্থীরা ভয় পেয়ে যায়। তার যদি এর পর দিন স্কুলটির কার্যক্রম কমিয়ে আনতো তাহলে এমন নাও হতে পারতো। অন্যদিকে আমরা দেখেছি হাসপাতালে অসুস্থদের ভিডিও লাইভ দেখানো হচ্ছে – এসব দেখে অন্যরাও ভীত হতে শুরু করে। যেহেতু একটি মানসিক অসুস্থতা তাই এসব বিষয় সরাসরি প্রচার বা অন্যশিশুদেও সামনে আনতে সচেতন হতে হবে।
চিকিৎসকরা জানান, প্রচন্ড গরম বা দাবদাহে শিশু শিক্ষার্থীদের নিয়ে অভিভাবকদের বাড়তি সচেতন হতে হবে। তারা যে গরমে রোদে ঘুরোঘুরি না কওে, প্রচুর পনি পান করে এবং বিষক্রিয়া তৈরী করে এমন খাবার না খায় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। এছাড়া স্কুলে কিংবা মাদ্রাসায় এমন পরিবেশ রাখতে হবে যেন দমবন্ধ পরিস্থিতি তৈরী না হয়। একই কক্ষে গাঁদাগাদি করে শিক্ষার্থীদের বসানো যাবে না। স্কুলে যাওয়া আসার ক্ষেত্রে ছাতা ব্যবহার করা উচিত হবে। আর যে শিক্ষার্থীই অসুস্থ হবে তাকে নির্ভয় দিয়ে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব চিকিৎসকের কাছে নিতে হবে।
প্রকাশ : শুক্রবার, ০৯ জুন ২০২৩, সকাল ১০:২০
Discussion about this post