কুমিল্লা প্রতিনিধি
কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে মঙ্গলবার (৬ জুন) আওয়ামী লীগের দুই গ্রুপের নেতাকর্মীরা পাল্টাপাল্টি কর্মসূচির ঘোষণা দিয়ে সংঘর্ষে জড়িয়েছে। এর মধ্যে এক পক্ষের ডাক দেওয়া কর্মসূচিতে যাওয়ার সময় অন্য পক্ষের নেতাকর্মীরা খেতাবপ্রাপ্ত এক বীর মুক্তিযোদ্ধাকে কুপিয়ে ও পিটিয়ে গুরুতর আহত করেছে বলে খবর পাওয়া গেছে।
মঙ্গলবার সকালে উপজেলার কোমারডোগা এলাকায় এই হামলার ঘটনা ঘটে বলে জানিয়েছেন যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা বাহার উদ্দিন রেজা (বীরপ্রতীক)।
মঙ্গলবার রাত ৮টার দিকে বীর মুক্তিযোদ্ধা বাহার উদ্দিন রেজা জানান, আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যার হুমকি এবং বিএনপি-জামায়াতের নৈরাজ্যের প্রতিবাদে মঙ্গলবার সকাল ১০টার দিকে উপজেলা সদরের চৌদ্দগ্রাম বাজার এলাকায় বিক্ষোভ মিছিলের আয়োজন আমাদের সংসদ সদস্য মুজিবুল হকের বিরোধী আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা।
ওই কর্মসূচিকে বানচাল করতে এমপির অনুসারীরা পাল্টা কর্মসূচির ঘোষণা দেয়। তারা ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের বিভিন্ন পয়েন্টে অস্ত্রসহ অবস্থান নিয়ে প্রতিটি যানবাহনে তল্লাশি করে- যেন মুজিবুল হক বিরোধীরা অনুষ্ঠানস্থলে যেতে না পারে। সকালে কুমিল্লা থেকে রওনা দিয়ে আমি মহাসড়ক হয়ে চৌদ্দগ্রামে যাচ্ছিলাম।
চৌদ্দগ্রাম অংশে প্রবেশের সময় তাদের প্রথম ব্যারিকেটে থাকা এমপির অনুসারীরা আমার গাড়িতে কোপ দেয়।
কিন্তু সেখান থেকে পার হয়ে কিছুদূর যেতেই তাজমহল হোটেলের সামনে তাদের আরেকটি ব্যারিকেটে পড়ি আমি।
বাহার উদ্দিন রেজা বলেন, ওই স্থানে আসা মাত্রই তারা আমার গাড়িতে আক্রমণ করে। তখন প্রাণে বাঁচতে মহাসড়কের পাশের কোমারডোগা এলাকায় চলে যাই। এ সময় এমপির অনুসারী ছাত্রলীগ ও যুবলীগের নেতাকর্মীরা দেশীয় অস্ত্রসহ আমার ওপর হামলা করে।
এক পর্যায়ে তারা রামদা দিয়ে আমার পায়ে কোপ দিয়ে আমাকে মাটিতে ফেলে দেয়। এরপর আমার পুরো শরীরে পিটিয়ে জখম করে। বারবার বলছিল তাদের নেতা নাকি আমাকে মেরে ফেলতে বলেছে।
বাহার উদ্দিন রেজা দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, আমি একজন খেতাবপ্রাপ্ত ও যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা। ভেবেছিলাম ছাত্রলীগ ও যুবলীগের নেতাকর্মীরা অন্তত আমার গায়ে হাত তুলবে না।
কিন্তু তারা আমাকে হত্যার চেষ্টা চালিয়েছে। আমি প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে এখন বাসায় আছি। একটু পরেই কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজে যাব, কারণ শরীরটা খুবই খারাপ লাগছে।
প্রসঙ্গত, মঙ্গলবার সকাল ৯টা থেকে চৌদ্দগ্রাম বাজার এলাকাসহ বেশ কয়েকটি স্থানে মুখোমুখি অবস্থান নেয় স্থানীয় আওয়ামী লীগের দুই গ্রুপের নেতাকর্মীরা। এ সময় নেতাকর্মীদের হাতে লাঠিসোঁটা ও রামদা-ছেনিসহ আগ্নেয়াস্ত্র দেখা গেছে। সকাল ১০টার দিকে চৌদ্দগ্রাম বাজারের উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স গেটে মহাসড়কের ওপর এক পক্ষের নেতাকর্মীরা অবস্থান নিলে যান চলাচল বন্ধ হয়ে পড়ে। এরপর সেখানে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া, ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে।
দলের নেতাকর্মী ও স্থানীয়রা জানায়, আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যার হুমকির প্রতিবাদে এবং জামায়াত-শিবিরের নৈরাজ্যের বিরুদ্ধে মঙ্গলবার সকালে বিক্ষোভ মিছিলের ডাক দেয় সাবেক রেলমন্ত্রী ও স্থানীয় সংসদ সদস্য মুজিবুল হকের বিরোধী আওয়ামী লীগের একটি গ্রুপ। এ গ্রুপের নেতৃত্ব আছেন আওয়ামী লীগের শ্রম ও জনশক্তি বিষয়ক উপ-কমিটির সদস্য এম তমিজ উদ্দিন ভূঁইয়া সেলিম, চৌদ্দগ্রাম পৌরসভার সাবেক মেয়র মিজানুর রহমান, উপজেলা যুবলীগের আহ্বায়ক শাহজালাল মজুমদারসহ বেশ কয়েকজন আওয়ামী লীগ নেতা। এক পর্যায়ে পাল্টা কর্মসূচি ঘোষণা করে মুজিবুল হকের অনুসারীরা। এতেই দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ এবং ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে।
এসব প্রসঙ্গে জানতে চাইলে মুজিবুল হকের অনুসারী চৌদ্দগ্রাম পৌরসভার মেয়র ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি জিএম মীর হোসেন মীরু বলেন, আওয়ামী লীগের বিপদগামী কিছু লোকজন বিএনপি-জামায়াতের লোকজনকে সঙ্গে নিয়ে শান্ত চৌদ্দগ্রামে বিশৃঙ্খলার চেষ্টা করেছিল। চৌদ্দগ্রামের মানুষ তাদেরকে ধাওয়া দিয়ে উপযুক্ত শিক্ষা দিয়েছে। কারণ চৌদ্দগ্রামের মাটি ও মানুষের নেতা হলেন মুজিবুল হক।
প্রকাশ : বুধবার, ০৭ জুন ২০২৩, সকাল ০৯:৫৩
Discussion about this post