পঞ্চগড় প্রতিনিধি
পঞ্চগড়ের বাংলাদেশ-ভারত সীমান্ত এলাকায় চোর সন্দেহে আব্দুস সালাম (৩৫) নামে এক বাংলাদেশি যুবককে পিটিয়ে হত্যা করে ভারতীয়রা। দীর্ঘ ৯ মাস পর শনিবার (২০ মে) সন্ধ্যায় লাশ ফেরত দেয় ভারতীয় পুলিশ।
এদিকে আব্দুস সালামের লাশ দেশে ফিরিয়ে আনার পর বাড়িতে উৎসুক জনতা ও স্বজনদের উপচে পড়া ভিড় লক্ষ্য করা গেছে। তবে দীর্ঘ সময় ধরে লাশটি আটকে রাখায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন স্থানীয়রা।
এর আগে শনিবার (২০ মে) সন্ধ্যা ৬টার দিকে জেলার তেঁতুলিয়া উপজেলার বাংলাবান্ধা-ফুলবাড়ী সীমান্তের ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট দিয়ে লাশটি দেশে আনা হয়।
প্রথমে তেঁতুলিয়া মডেল থানা পুলিশ লাশটি গ্রহণ করে আইনি প্রক্রিয়া ও সকল ইমিগ্রেশন ব্যবস্থা সম্পন্ন করে পঞ্চগড় সদর থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করে।
ওই রাতেই পুলিশের কাছ থেকে লাশ গ্রহণ করে পরিবারের সদস্যরা।
জানা যায়, আজ রোববার (২১ মে) সকালে নামাজে জানাজা শেষে পারিবারিক গোরস্তানে আব্দুস সালামের লাশ দাফন করা হবে।
নিহত আব্দুস সালাম পঞ্চগড় জেলা সদরের সাতমেরা ইউনিয়নের কাহারপাড়া এলাকার মৃত শহিদুল ইসলামের ছেলে। জুনায়িদ নামে তার একটি ৬ মাসের ছেলে সন্তান রয়েছে।
নিহতের পরিবারের সদস্যরা ও স্থানীয়রা অভিযোগ করে বলেন, ঘটনার পর দীর্ঘ সময় ধরে ভারত থেকে লাশ দেশে আনার জন্য সবগুলো দপ্তরে যোগাযোগ করা হয়। প্রায় ৯ মাস পর ভারতীয় পুলিশ তাদের সবরকমের প্রক্রিয়া শেষে শনিবার (২০ মে) সন্ধ্যায় লাশ বাংলাদেশে পাঠায়। আমরা পুলিশের কাছ থেকে লাশ গ্রহণ করেছি। তবে এই হত্যার ঘটনায় যারা সরাসরি জড়িত, তাদের আইনের আওতায় এনে কঠোর শাস্তি দাবি করছি। না হয়, পরবর্তীতে আরও অনেকের সঙ্গে এমন ঘটনা ঘটতে পারে। সব দেশে আইন আছে। আর আইনের ঊর্ধ্বে কেউ না। তারা এই নির্মম হত্যাকাণ্ড না ঘটিয়ে তাকে পুলিশের হাতে তুলে দিতো পারতো।
নিহতের স্ত্রী জেরিন আক্তার বলেন, যাওয়ার আগে সে (স্বামী সালাম) বাড়িতে খাওয়া দাওয়া করে বের হয়। ঘটনার আগের দিন রাতে দরজা বন্ধ করে ঘুমিয়ে যেতে বলে আমাকে। পরদিন সকাল ৯টার সময় জানতে পারি, তাকে ভারতীয়রা চুরির অপবাদ দিয়ে গণপিটুনিতে হত্যা করেছে।
নিহতের বড় ভাই আলিম হোসেন বলেন, লাশ পাওয়ার জন্য বিভিন্ন অফিসে আবেদন করি। কিন্তু তেমন কোনো সাড়া পাচ্ছিলাম না। সবাই অপেক্ষায় ছিলাম, কবে তার লাশ দেশে আনা সম্ভব হবে। দীর্ঘ ৯ মাস পর ভারতের সাড়া পেয়ে আমি একজন ইউপি সদস্যকে সঙ্গে নিয়ে গত ১৬ মে ভারতে যাই, ছোট ভাইয়ের লাশ দেশে আনার জন্য। আজ (২০ মে) দেশে আনা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, অবৈধভাবে গেলেও দেশে বিচার আছে। এভাবে হত্যা করে ভারতীয়রা আইন লঙ্ঘন করেছে। আমরা এর বিচার চাই।
পঞ্চগড় সদরের সাতমেরা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান (ইউপি) রবিউল ইসলাম রবি বলেন, ঘটনার পর থেকে লাশ না পেয়ে এক পর্যায়ে পরিবারের সবাই প্রায় আশা ছেড়ে দেয়। এর মাঝেও আমাদের চেষ্টা অব্যাহত ছিল। আমরা প্রশাসনসহ বিভিন্ন দপ্তরসহ হাইকমিশনে যোগাযোগ করি। অবশেষে ৯ মাস পর প্রশাসনের সহায়তায় লাশ দেশে ফেরত আনা সম্ভব হয়েছে।
পঞ্চগড় সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল লতিফ মিঞা বলেন, লাশ পাওয়ার পর সব ধরণের আইনি ব্যবস্থা শেষে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
এর আগে বাংলাবান্ধা বন্দর এলাকায় লাশ হস্তান্তরের বিজিবি-বিএসএফ সদস্য, জনপ্রতিনিধি ও নিহতের পরিবারের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
উল্লেখ্য, গত ২০২২ সালের ২৩ আগস্ট রাতে যুবক সালাম কয়েকজন যুবকের সঙ্গে ভারতের রাজগঞ্জ ব্লকের ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত লাগোয়া ১৯৫ ব্যাটালিয়নের চাউলহাটি সংলগ্ন বড়ুয়াপাড়া গ্রামে অবৈধভাবে প্রবেশ করে। স্থানীয়রা টের পেয়ে তাদের ধাওয়া করলে লাগোয়া চা বাগানে লুকায়। রাত থেকে গ্রামবাসী পাহারা দেওয়ায় পরদিন ২৪ আগস্ট সকালের আলোয় সালামকে ধরতে সক্ষম হয় এবং গণপিটুনি দেয়। এতে তার মৃত্যু হয়।
খবর পেয়ে বিষয়টি নিয়ে তদন্তে নামে ভারতের রাজগঞ্জ থানার পুলিশ। এরপর তারা লাশটি স্থানীয় একটি হাসপাতালের হিমঘরে রেখে দেয়। দীর্ঘ ৯ মাস পর পরিবারের সদস্যদের চেষ্টায় সালামের লাশ দেশে ফিরিয়ে আনা সম্ভব হয়।
প্রকাশ: রবিবার, ২১ মে ২০২৩, সকাল ১০:৫৮
Discussion about this post