নিজস্ব প্রতিবেদক, কুমিল্লা
কুমিল্লার ঈদবাজারে খাদি পাঞ্জাবি পুরুষের চাহিদার শীর্ষে রয়েছে। মিহি সুতায় দৃষ্টিনন্দন, আরামদায়ক ও দাম কিছুটা কম হওয়ায় পছন্দের তালিকায় এক নম্বরে রয়েছে। যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বাহারি ডিজাইনের কারণে কুমিল্লার খাদির কদর রয়েছে সারা দেশে।
সোমবার (১০ মে) কুমিল্লা মহানগরীর কান্দিরপাড়, লাকসাম রোড, মনোহরপুর ও রাজগঞ্জ এলাকার খাদি দোকানগুলোতে ঘুরে এমন চিত্র চোখে পড়েছে।
কান্দিরপাড়ের জোসনা স্টোর, খাদি নীড়, পূর্বাশা গিফট অ্যান্ড খাদি, কুমিল্লা খদ্দর, মনোহরপুরে প্রসিদ্ধ খাদি ভাণ্ডার, খাদি ভবন, সৌরভ খাদি ও খাদি বিতানসহ অন্তত অর্ধশতাধিক খাদি দোকানে গিয়ে ক্রেতাদের উপচেপড়া ভিড় দেখা যায়।
এসব দোকানে নানা ধরনের আধুনিক রুচিশীল পোশাক চোখে পড়েছে। প্রতিটি পিস রঙিন ও সাদা পাঞ্জাবির দাম সর্বনিম্ন ৫০০ থেকে ৩ হাজার ৫০০ টাকা পর্যন্ত, থ্রি-পিস ৫০০ থেকে ২ হাজার ৫০০ টাকা এবং শর্ট ফতুয়া ৪০০ থেকে এক হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। খাদি কাপড়ের মধ্যে হাতে নকশা করা পাঞ্জাবির দাম একটু বেশি। এছাড়া রয়েছে বিছানা চাদর, গায়ের চাদরসহ বিভিন্ন পোশাক।
খাদি ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এ শিল্পের সঙ্গে জড়িয়ে আছে ভারতবর্ষের স্বাধিকার আন্দোলন ও বাঙালি ঐতিহ্য। এ কাপড় মাটির খাদে (গর্তে) বসে তৈরি করা হতো। সে হিসেবে এর নাম দেওয়া হয় ‘খাদি’। শতবর্ষের ঐতিহ্যের খাদি আলোচনায় আসে ১৯২১ সালে ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের সময়। তখন মহাত্মা গান্ধীর আহ্বানে ভারতবর্ষে অসহযোগ আন্দোলনের সময় কুমিল্লায় খাদি শিল্প প্রতিষ্ঠা লাভ করে। সেই সময় বিদেশি পণ্য বর্জন করার ডাক আসে। সর্বত্র এক আওয়াজ ‘মোটা কাপড়-মোটা ভাত’। সেই মোটা কাপড় এখন মিহি হয়েছে। কাপড়ে লেগেছে নান্দনিকতার ছোঁয়া। কুমিল্লার খাদি এখন শৈল্পিকতার ছোঁয়ায় দেশ-বিদেশে সমাদৃত হয়ে আসছে। এ কাপড় যাচ্ছে ইউরোপ, আমেরিকা ও মধ্যপ্রাচ্যসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে।
চল্লিশ বছরের মো. আরিফুল ইসলাম হৃদয়। তিনি চাঁদপুর থেকে এসেছেন কুমিল্লার খাদি পাঞ্জাবি কিনতে। গত ১০ বছর ধরে তিনি কুমিল্লার খাদি কাপড় দিয়ে ঈদ উদযাপন করেন। স্বজনদের জন্যেও তিনি নিয়ে থাকে খাদি পোশাক।
খাদি শো-রুম ছাড়াও প্রযুক্তির এ যুগে পিছিয়ে নেই অনলাইনে খাদি পোশাক বিক্রি। মো. আবু মুছা নামে এম এক তরুণ উদ্যোক্তার সঙ্গে কথা হয়। তিনি বলেন, ‘খাদি পাঞ্জাবির চাহিদা সারা দেশে তরুণদের পছন্দের শীর্ষে রয়েছে। রমজানের ঈদকে সামনে রেখে ইতোমধ্যে প্রায় সাড়ে চার হাজারের অধিক পাঞ্জাবি বিক্রি করেছেন তিনি। তার মতো কুমিল্লায় প্রায় অর্ধশতাধিক উদ্যোক্তা রয়েছেন যারা শুধুমাত্র অনলাইনে খাদি পোশাক বিক্রি করে থাকেন।’
মনোহরপুর প্রসিদ্ধ খাদি ভাণ্ডারের স্বত্বাধিকারী সাইফুদ্দিন আহমেদ লিমন বলেন, ‘কুমিল্লা খাদি শিল্পের একটা শক্ত ভিত্তি আছে। যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে খাদি শিল্পে লেগেছে নান্দনিকতার ছোঁয়া। ডিজাইনে এসেছে নতুনত্ব। শতবর্ষের খাদিপণ্য তার গুণগত মান বজায় রেখে আধুনিকতার সংমিশ্রণে প্রতিযোগিতার বাজারে চাহিদা ধরে রেখেছে।’
পূর্বাশা গিফট অ্যান্ড খাদির স্বত্বাধিকারী আল হেলাল বলেন, ‘সময়ের সঙ্গে মিল রেখে আমরা পোশাকে বৈচিত্র্য আনি। যে কারণে আমাদের পোশাকের গুণগত মান ভালো হয়। দামও একটু বেশি।’
কুমিল্লা জেলা দোকান মালিক সমিতির সভাপতি সাধারণ সম্পাদক আতিকউল্লাহ খোকন বলেন, কুমিল্লার খাদি পোশাকের চাহিদা দেশ ব্যাপী সমাদৃত। সারা দেশ থেকে প্রচুর ক্রেতা আসেন এখানে। যুগ যুগ ধরে এ শিল্প ধরে রাখবে ঐতিহ্য। খাদি ব্যবসায়ীদের কাছে এমনটাই প্রত্যাশা করেন তিনি।
প্রকাশ : ১০ মে ২০২১, রাত ১১:০৫
Discussion about this post