চট্টগ্রাম অফিস :
দেশের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও ব্যস্ত ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে বিভিন্ন গাড়িতে যাত্রীবেশে ছিনতাইয়ের ঘটনা বেড়ে চলছে। এতে আতংকের মধ্যে চলাচল করতে হচ্ছে যাত্রীদের। বিশেষ করে মাইক্রো, হাইএইস, নোহা গাড়িতে এসব ছিনতাইয়ের ঘটনা বেশি ঘটছে। তাই অপরিচিত এসব গাড়ি এড়িয়ে চলতে অনুরোধ করেছেন আইনশৃংখলা রক্ষাকারী কর্মকর্তারা।
জানা গেছে, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের মীরসরাই, বারইয়ারহাট-সীতাকুন্ডে যারা প্রতিদিন গাড়িতে যাওয়া আসা করেন তাদের টার্গেট করে সংঘবদ্ধ ছিনতাইকারী দল। সপ্তাহের শেষ কর্ম দিবস বৃহম্পতিবার বিভিন্ন চাকুরীজীবী তাড়াহুড়ো করে ছুটিতে যাওয়া ও গাড়িতে যাত্রীর চাপ বেশি থাকার সুযোগ নিয়ে কৌশলে ওইদিন ছিনতাইয়ের ঘটনা বেশি ঘটায়। কয়েকটা সংঘবদ্ধ চক্র ব্যবসায়ী ও ব্যাংকারদের টার্গেট করছে বেশি।
মীরসরাই উপজেলার পূর্ব খৈয়াছরা গ্রামের ভুক্তভোগি সাজ্জাদ হোসেন জানান, গত বুধবার সন্ধা ৭টায় স্ত্রী সেলিনা আক্তারসহ বারইয়াহাট থেকে একটি হাইএইস গাড়িতে বড়তাকিয়ার উদ্যেশ্যে রওনা হন। নাহার এগ্রো এলাকায় পৌঁছলে দুজনকে ছুরি ও পিস্তলের মুখে জিম্মি করে স্বর্ণালংকার, মোবাইল ও নগদ টাকাসহ লক্ষাধিক টাকার মালামাল নিয়ে যায় এবং তাদেরকে রাস্তায় ফেলে দেয়। এ বিষয়ে জোরারগঞ্জ থানায় অভিযোগ দিয়েছেন তিনি।
ভুক্তভোগী কামাল উদ্দিন চৌধুরী কলেজের প্রভাষক আলী আক্কাস জানান, এক সপ্তাহ আগে মীরসরাই থেকে ফেনী যাবার জন্য একটি মাইক্রোবাসে উঠলে পথে গিয়ে ওরা নগদ টাকা স্বর্ণালংকার ছিনিয়ে নেয়। আবার মেরে জিম্মি করে অস্ত্রের মুখে এটিএম কার্ড দিয়ে ব্যাংক থেকে লক্ষাধিক টাকা তুলে নেয়। মীরসরাই থানায় জিডি করেছেন তিনি।
সম্প্রতি বারইয়ারহাট থেকে চট্টগ্রাম যাওয়ার জন্য মাইক্রোবাসে ওঠেন ইসলামী ব্যাংক বারইয়ারহাট শাখার কর্মকর্তা আব্দুল মোমিন ও এজেন্ট ব্যাংকিং কর্মকর্তা মিজানুর রহমান। এ সময় অস্ত্রের মুখে সব ছিনিয়ে নেয় মাইক্রোতে যাত্রীবেশে থাকা ছিনতাইকারীরা। মোবাইল, মানিব্যাগ, প্রয়োজনীয় কাগজপত্র, এটিএম কার্ড ছিনিয়ে নেয়। ছিনতাইকারীর কবলে পড়েছে ইস্টার্ন ব্যাংক লিমিটেডের (ইবিএল) মীরসরাই উপশাখার ব্যবস্থাপক জামাল উদ্দিন (৩৮)। রাত আনুমানিক ৯টার সময় মিরসরাই সদর থেকে হাইস গাড়ি যোগে ফেনী শহরে যাওয়ার পথে এই ঘটনা ঘটেছে। পরে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ফেনীর ফাজিলপুর এলাকা থেকে আহত অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে বারইয়ারহাট জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে ঢাকায় নিয়ে তাকে চিকিৎসা করানো হয়। দীর্ঘ একমাস চিকিৎসার পর তিনি সুস্থ হয়ে বাড়ি ফেরেন।
১৫ দিন আগে চট্টগ্রাম শহর থেকে মাইক্রো যোগে বাড়ি ফেরার পথে সাহেরখালী ইউনিয়নের দুই ভাইকে জিম্মি করে সর্বস্ব লুট করে নেয়। সম্প্রতি বড়দারোগারহাটের এক শিক্ষকের ল্যাপটপ, জমি কেনার টাকাসহ লুট করে কুমিল্লায় নিয়ে তাকে ফেলে দেয়া হয়।
এই বিষয়ে জোরারগঞ্জ হাইওয়ে পুলিশের ইনচার্জ ফিরোজ উদ্দিন বলেন, ইদানিং ছিনতাইয়ের ঘটনা বেড়ে যাওয়ায় সন্ধ্যার পর বারইয়ারহাট কেন্দ্রিক আমাদের কয়েকটি টিম কাজ করছে। আমাদের জনবল সংকট রয়েছে। তারপরও আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি। তিনি আরো বলেন, চালক, পথচারী ও যাত্রীদের সচেতনতায় লিফলেট বিতরণসহ নানা কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে হাইওয়ে পুলিশ। অনাকাঙ্খিত পরিস্থিতি এড়াতে সচেতনতার বিকল্প নেই।
তবে কয়েকজন ভুক্তভোগী যাত্রী বলেন, ছিনতাই রুখতে পুলিশকে তৎপরতা আরো বাড়াতে হবে।
মীরসরাই থানার ওসি মুজিবুর রহমান বলেন, আমরা ইতিমধ্যে বেশকিছু ডাকাত আটক করেছি। শিগগিরই ব্যাপক অভিযান পরিচালিত হবে। তবে জনগণকেও নিজ নিজ নিরাপত্তার চেষ্টা করার পরামর্শ দেন তিনি।
প্রকাশ: ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০২১, রাত ০৮:৩৮
Discussion about this post